স্মার্টফোন দ্রুত নষ্ট হবার কারণ কি? কিভাবে স্মার্টফোনের আয়ু বাড়াবেন?
বর্তমান সময়ে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আমাদের হাতের স্মার্টফোন। সব কাজেই আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি। ঘড়ি দেখা থেকে থেকে কিভাবে রান্না করবেন, শাড়ি পরবেন, কোন শব্দের মানে কি, কোন জিনিস কবে আবিষ্কার হয়েছে এইসব কিছু। মানে জুতা সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ সবকিছুই করে থাকি স্মার্টফোনের মাধ্যমে। কোন একদিন যদি ইন্টারনেটের কানেকশন না থাকে বা ডেটা স্লো হয় আমাদের যেন আর সময়ই কাটতে চায়না।
নিজেদের প্রয়োজনীয় সকল ফাইল, ডকুমেন্ট, ছবি, বই, ভিডিও, গান,
পিডিএফ মানে প্রয়োজনীয় সকল কিছুই রাখি আমরা স্মার্টফোনে। যাতে যেকোন সময়
সহজে খুজে পাই। কিন্তু এত কাজের যে স্মার্টফোনটি, আমরা এর ব্যবহারে কতটা
যত্নশীল? অবাক হচ্ছেন কি প্রশ্নটা শুনে? ভাবছেন আপনি ত এর সর্বোচ্চ যত্ন
নিয়ে থাকেন, কভার লাগিয়ে, নিয়মিত চার্জ দিয়ে, তাইনা? কিন্তু আসলেই কি নিয়ম
মেনে সবকিছু করছেন? স্মার্টফোনের একটি ধারনক্ষমতা আছে৷ এরচেয়ে বেশী এটা
দিয়ে কিছু করতে গেলে তা ফোনের উপর কার্যক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আজ আমাদের আয়োজন সাজিয়েছি এমন কিছু ভুলের বর্ননা নিয়ে যার জন্য আমাদের স্মার্টফোন কার্যকারিতা হারায়। চলুন প্রিয় পাঠক দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
মোবাইল ফোন দ্রুত নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ
১. অধিকক্ষন ব্যবহার
আমরা যে কাজটি করে থাকি তা হচ্ছে, সারদিন ফোন ব্যবহার করে থাকি, কোন ধরনের বিরতি ছাড়াই। যতক্ষন পর্যন্ত চার্জ শেষ না হয়, অনেকে তো ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়া না পর্যন্ত ব্যবহার করা বন্ধ করেন না। এতে খুব দ্রুত ব্যাটারি কার্যক্ষমতা হারায়। এছাড়া ফোনের অ্যাপগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে চায়না।
অনেকক্ষন ব্যবহার করলে টাচস্ক্রিনেও সমস্যা হয়, তাই ফোন একটানা অনেকক্ষন ব্যবহার করবেন না। মানুষ যেমন অনেকক্ষন কাজ করার পর বিরতি প্রয়োজন হয়, তেমন ফোনেরও বিরতি প্রয়োজন হয়। যদিও ফোন একটি যন্ত্র, কিন্তু এর সব যন্ত্রাংশ ভাল রাখতে এর ব্যবহারে সতর্ক হন।
২. একসাথে অনেক অ্যাপ ব্যবহার
স্মার্টফোনে সবসময়ই নতুন ফিচার আসছে। এখন যেহেতু অনেক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ড এ রেখে ব্যবহার করা যায়, তাই আমরা ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক অ্যাপ ব্যবহার করি। অনেক সময় পপ আপ করে মুভি দেখি, এই ফাকে চ্যাট করি, আবার পিডিএফ পড়ি।
একসাথে এত অ্যাপ ব্যবহারে স্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ব্যাটারি ও টাচস্ক্রিনে সমস্যা দেখা দেয়। ফোন খুবই স্লো কাজ করে। তাই ব্যাকগ্রাউন্ডে যত অ্যাপই রাখা যাক না কেন, খুব দরকার ছাড়া কোন অ্যাপ রাখবেন না৷ এতে ফোনের অ্যাপগুলো ভালভাবে দ্রুত কাজ করবে।
৩. ফোন সঠিকভাবে চার্জ না দেওয়া
ফোনটি সারাদিন ব্যবহার করা হলেও ঠিকমত চার্জ দিতে ভুলে যাই আমরা। কখনো ১০০ % চার্জ দেওয়াই হয়না। সবসময় ১০-২০% চার্জ হলেই আমরা আবার ব্যবহার শুরু করি। আবার অনেক সময় রাতে ফোন চার্জ দিয়ে অনেকক্ষন চার্জে রেখে দেই। প্রায় ৮-১০ ঘন্টা চার্জে রাখা হলে ফোনের ব্যাটারি ওভারচার্জ হয়ে যায়, যার ফলে ব্যাটারি ফুলে যায়।
চার্জে দেওয়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে ৫০ পারসেন্ট এর কম চার্জ থাকলে চার্জ দেওয়া এবং ৯০-৯৫ পারসেন্ট চার্জ হয়ে গেলে তা ব্যবহার করা। কিন্তু সপ্তাহে একদিন অবশ্যই ১০০% চার্জ দেওয়া উচিত। চার্জ কম থাকলে ব্যবহার করলে ফোনের কোন অ্যাপ সঠিকভাবে কাজ করেনা। তাই সঠিকভাবে নিয়মিত ফোন চার্জ করুন।
৪. অপ্রয়োজনীয় ফাইল ও অ্যাপ রাখা
প্রতিটি ফোনের একটি ধারনক্ষমতা আছে। আমরা যদি সেই ধারনক্ষমতার চেয়ে কিছু জায়গা বাকি রেখে ব্যবহার করি, তাহলে ফোনটি ভাল সার্ভিস দেবে। কিন্তু অনেকেই পুরো মেমরি ব্যবহার করেন, এবং স্টোরেজ ফুল নোটিফিকেশন না আসা পর্যন্ত ফোনের মেমরি খালি করার জন্য কোন ফাইল ডিলিট করেন না৷ এটা ফোনের জন্য খুবই খারাপ, এতে ফোনের স্বাভাবিক মেমরিও কাজ করেনা। অনেক অ্যাপ বা ফাইল ডিলিট করা হলেও অল্প ব্যবহারের পরই আবার স্টোরেজ ফুল দেখানো শুরু হয়।
এভাবেই মূলত একটি ফোন ধীরে ধীরে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। অথচ যত্নসহকারে ব্যবহার করা হলে একটি ভালমানের স্মার্টফোন ২-৩ বছর অনায়াসে ভাল সার্ভিস দেবে। আপনি যদি মডেল পরিবর্তনের জন্য বিক্রয়ও করে দিতে চান, তা হলেও ফোনটি ভাল থাকতে হবে। নাহলে অন্যকেউ এটা কিনবে না। তাই নিয়মিত অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করুন, মেমরিতে যথাসম্ভব জায়গা রাখার চেষ্টা করুন।
৫. ভাইরাসযুক্ত অ্যাপ ব্যবহার
প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, ততই নতুন নতুন অ্যাপ প্রতিদিন বাজারে আসছে। এরমধ্যে কিছু অ্যাপ কোন কাজেরই নয়, শুধুমাত্র অর্থ আয় এবং ভাইরাস ছড়ানোর জন্য অ্যাপগুলো তৈরি করা হয়। যেমন ২০৫০ সালে আপনার চেহারা কেমন হবে, কয়টা বাচ্চা হবে, আপনার ভাগ্য জেনে নিন এ জাতীয় উদ্ভট অ্যাপ এবং বিভিন্ন অখ্যাত অ্যাপ, ভাইরাস ক্লিনার অ্যাপ থেকে মূলত ভাইরাস ছড়ায়।
তাই এ ধরনের অ্যাপ ডিলিট করে দিন। ফোনে বিশ্বস্ত সোর্স ছাড়া অপরিচিত কোন সোর্স থেকে অ্যাপ বা লিংক ডাউনলোড করবেন না। ভাইরাস আক্রান্ত ফোন কখনোই ভাল সার্ভিস দেয় না।
৬. ডাউনলোড হিস্ট্রি, কুকিজ ক্লিয়ার না করা
বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে আমরা যেসব ভিডিও বা ডাউনলোডগুলো করে থাকি তার হিস্ট্রি নিয়মিত ক্লিয়ার না করলে সেগুলো জমে ফোন স্লো করে দেয়। এজন্য নিয়মিত হিস্ট্রি ও কুকিজ ক্লিয়ার করা উচিত।
৭. লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার করা
লাইভ ওয়ালপেপার দেখতে সুন্দর হলেও প্রচুর চার্জ নষ্ট করে, ফলে বারবার চার্জে দিতে হয় ফোনটি। এজন্য লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার না করে যেকোন স্থির ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন। অনেক সময় লাইভ ওয়ালপেপারে ভাইরাসও থাকে, এজন্য এটা এভয়েড করুন।
৮. চার্জে রেখে ব্যবহার
ফোন চার্জে রেখে ব্যবহারের ভুল কখনোই করবেন না। অনেকে চার্জে রেখে গান পর্যন্ত শোনের, ইয়ারফোনে কথাও বলেন। এতে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়, ফোন ব্লাস্ট হওয়ার মত ঘটনাও ঘটতে পারে। আর ফোন চার্জে রেখে ব্যবহার করলে তা গরম হয়ে যায় এবং দ্রুত ব্যাটারি কার্যক্ষমতা হারায়। তাই এটা করা থেকে বিরত থাকুন।
উপসংহার
ফোনের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে যে আমরা জানিনা এমনটি নয়, কিন্তু আমরা এগুলো মানতে নারাজ। ভাবি যে কি এমন হবে, এগুলো করলে! কিন্তু এভাবেই শখের ফোনটির আয়ুস্কাল আমরা কমিয়ে ফেলছি। উপরিউক্ত কাজগুলো এড়িয়ে চললে আমরা অবশ্যই স্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারব। এবং সময়ের আগেই ফোনটি নষ্ট হবে না।
আশা করি স্মার্টফোনের কার্যক্ষমতা নষ্টের কারনগুলো জেনে আমরা তা থেকে বাচতে পারব। এ বিষয়ে যেকোন তথ্য ও মতামত জানাতে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ।
0 Comments