ফোন হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়

ফোন হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়

সাইবার যুদ্ধের মূল হাতিয়ার হচ্ছে হ্যাকিং এবং ব্যবহারকারীর অজান্তেই কোন ডিভাইসে অনুনোমদিতভাবে প্রবেশ করাই হ্যাকিং নামে পরিচিত। হ্যাক করার মাধ্যমে যে কোন ডিভাইস সহজেই নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে হ্যাকার। যার ফলস্বরূপ, তথ্য চুরি, গোপন তথ্য ফাঁস, ট্রেসিং-ট্র্যাকিং এর মত ঘটনা ঘটে।

“how to avoid phone hacking”

ফোন হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়

ওয়্যারলেস সংযোগ আছে এমন প্রতিটি স্মার্ট ডিভাইসই হ্যাক করা সম্ভব। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় প্রয়োজন নিজের ডিভাইসকে হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করা। কিছু ছোট পদক্ষেপ নিলেই ব্যক্তিগত ডিভাইস হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে।

ডিভাইসে সিনট্যাক্স পাসওয়ার্ড ব্যবহার

পাসওয়ার্ড তৈরির ক্ষেত্রে নাম, ফোন নাম্বার, জন্ম তারিখ, বয়স কিংবা পরিচিত কোন সংখ্যা ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। শুধু নাম্বার এবং অ্যালফাবেটিকাল ডিজিট না ব্যবহার করে সিনট্যাক্স ডিজিট ব্যবহার করলে পাসওয়ার্ড সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে। 

ওয়্যারলেস কানেকশন বন্ধ রাখা

ওয়্যারলেস কানেকশন বলতে আমরা বুঝি ওয়াইফাই বা মোবাইল ডাটা এবং ব্লু-টুথ কানেকশন। স্মার্ট ডিভাইসে ওয়্যারলেস কানেকশন হ্যাকারদের জন্য সুবিধা করে দেয়। ওয়্যারলেস কানেকশন ব্যবহার করে হ্যাকাররা খুব সহজেই ডিভাইসে স্পাইওয়্যার প্রবেশ করাতে পারে। বিশেষ করে ফাইল ট্রান্সফার সিস্টেমের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার ডিভাইস দখলে নিয়ে নিতে পারে হ্যাকাররা। তাই প্রয়োজন ছাড়া ওয়্যারলেস কানেকশন বন্ধ রাখাই শ্রেয়।

অ্যান্টিভাইরাসের ব্যবহার

অ্যান্টিভাইরাসের মূল কাজ হচ্ছে ডিভাইসকে ম্যালওয়্যার এবং স্পাইওয়্যার থেকে রক্ষা করা। আর হ্যাকাররা মূলত স্পাইওয়্যার দিয়ে তথ্য চুরি করে থাকে। প্রতিটি স্মার্টফোনে বিল্ট ইন অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল করা থাকে এবং কম্পিউটারে নিজস্ব ফায়ারওয়ালের পাশাপাশি আলাদা করে ইন্সটল করে নেওয়া যায়। কম্পিউটারের জন্য থার্ড পার্টি থেকে আন্টিভাইরাস না কিনে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে কিনে নিতে পারবেন গ্রাহকরা। এক্ষেত্রে তথ্য চুরি বা হ্যাক হওয়ার কোন ভয় থাকে না। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে বিল্ট ইন অ্যান্টিভাইরাস কে প্রতিনিয়ত আপডেট করে ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখা যায়।

অপরিচিত অ্যাপ পরিহার

ভেরিভাইড নয় এমন অ্যাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। অনেকেই ছবি তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিউটি ক্যাম এবং এডিটিং এর জন্য ফ্রি অপরিচিত সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকি। এমনকি, অনেক সময় টাকা দিয়ে কিনতে হবে বলে ভ্যারিফাইড অ্যাপগুলোর ক্র্যাক ভার্সন ব্যবহার করে থাকি। যা হ্যাকারদের জন্য তথ্যচুরির দুয়ার খুলে দেয়। অনেক সময় ভ্যারিফাইড নয় এমন অ্যাপ ইন্সটল করলে সাথে অন্য একটি অ্যাপ ইন্সটল হয়ে যায় যা স্পাইওয়্যার এবং ম্যালওয়্যার সমৃদ্ধ থাকে। ফোনে কোন অযাচিত বা অবাঞ্ছিত অ্যাপ দেখলে তা সাথে সাথে মুছে ফেলুন।

অযাচিত লিংক পরিহার

ইমেইলে অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ইনবক্সে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার কিংবা পুরষ্কারের দোহাই দিয়ে আসা লিংকে ক্লিক বা ভিজিট করা থেকে বিরত থাকুন; বিরত থাকুন অতি চিত্তাকর্ষক কোন পোস্টের লিংকে ক্লিক করা থেকে। এধরনের অধিকাংশ লিংকই থাকে হ্যাকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত ‘ফিশিং লিংক’। এসব লিংকে ক্লিক করলে আপনার অজানতেই ডাউনলোড হয়ে যেতে পারে স্পাইওয়্যার এবং ম্যালওয়্যার।

পারমিশন টু এক্সেস

কোন অ্যাপ ইন্সটল করার পরে ডিভাইস এক্সেস করার পারমিশন দেওয়ার আগে যাচাই বাছাই করা উচিত। হতে পারে আপনি এমন অ্যাপ ইন্সটল করেছেন যা আপনার ডিভাইসের মাইক, ক্যামেরা কিংবা গ্যালারীর এক্সেস চাচ্ছে অথচ অ্যাপটির সাথে আপনার ডিভাইসের মাইক, ক্যামেরা কিংবা গ্যালারীর কোন সম্পর্কই নেই। খেয়াল রাখুন আপনি হ্যাকারকে সুযোগ করে দিচ্ছেন না তো!

পাবলিক ওয়াইফাই পরিহার

একটি ওয়াইফাই লাইনে একটি আইপি অ্যাড্রেস থাকে আর এক আইপিতে সংযোগ থাকা সকল ডিভাইসের ডাটা সহজেই হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব। একই আইপিতে থাকা সকল ডিভাইস এক্সপোজ থাকায় অই আইপিতে ঢুকে সকল ডিভাইসে প্রবেশের সক্ষমতা রাখে হ্যাকাররা; এমনকি আইটি এক্সপার্ট কেউ থাকলে চাইলেই এক্সেস করতে পারবে আপনার ডিভাইস। তাই হাসপাতাল, রেস্ট্রুরেন্ট তথা পাবলিক ওইফাই ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

বিল্ট ইন অ্যাপ লক ব্যবহার

বিল্ট ইন আপ লক অনেক বেশি কার্যকরী। ফোন আনলক করতে পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি সকল অ্যাপে লক সিস্টেম চালু করে রাখুন। হ্যাকার যেকোনোভাবে আপনার মোবাইল ফোন হ্যাক করে ফেলতে পারলেও বিভিন্ন অ্যাপ থেকে আপনার অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারবে না।

রুটকে না

অনেকেই নিজের আন্ড্রোয়েড ফোন কে রুট করে ব্যবহার করতে সাচ্ছন্দ বোধ করি। ফোনের সিস্টেম স্টোরেজ বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু রুট করে ফোন ব্যবহার করলে ফোনের সিকিউরিটি সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়। তখন হ্যাকার খুব সহজেই ডিভাইসটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তথ্য চুরি করে নিতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ফোন হ্যাক হওয়ার লক্ষণগুলো কী কী?

খেয়াল রাখুন আপনার স্মার্টফোনের চার্জ দ্রুত শেষ হচ্ছে কি না, ক্যামেরা কিংবা মাইক অন হয়ে আছে কিনা, কম্পিউটার বা ফোনে নতুন কোন অপরিচিত ফাইল আছে কিনা। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিনিয়ত অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করুন। অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার বা অ্যাপ সরিয়ে ফেলুন। চোখ রাখুন আপনার ডিভাইসে কোন অস্বাভাবিক কোন কার্যকলাপ হচ্ছে কিনা। এই ছোটখাট বিষয় খেয়াল রাখলেই আপনার ডিভাইস হ্যাক হওয়া থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

তো এই ছিল আজকের “ফোন হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়” সম্পর্কে আলোচনা। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ। 

Post a Comment

0 Comments