হিপ্নোটিজম: ভয়ংকর অতীন্দ্রমোহনী মহাবিদ্যা

হিপ্নোটিজম: ভয়ংকর অতীন্দ্রমোহনী মহাবিদ্যা

হিপ্নোটিজম: ভয়ংকর অতীন্দ্রমোহনী মহাবিদ্যা

হিপ্নোটিজমকে মানবজীবনে সফলতা লাভের অন্যতম সেরা উপায় বলে অভিহিত; কেননা মোটিভেশন যেমন আপনাকে উজ্জীবন করে তেমনি হিপ্নোটিজম দ্বারা আপনি অন্যকে উজ্জীবিত করে যেমন নিজের স্বার্থসিদ্ধ করতে পারেন তেমনি নিজের ওপর হিপ্নোসিস (সেল্ফ হিপ্নোসিস) ক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্দীষ্ট উদ্দেশ্যে সফলতা লাভ সমর্থ হউন।

আসুন আজ হতে ধারাবাহিক ভাবে আমরা হিপ্নোটিজম শিক্ষা শুরু করে দিই......

আজ আমরা হিপ্নোটিজম বা সম্মোহন বিদ্যা কিছু পরিভাষা এবং সংজ্ঞার সাথে পরিচিত হবো:

"যে বিদ্যার বলে একজন মানুষ অপর একজন মানুষকে সম্মোহন বা সম্মোহিত করে তাকে হিপ্নোটিজম বা সম্মোহন বিদ্যা বলে"

হিপ্নোটিজম ব্যবহারিক মনোবিজ্ঞান বা এপ্লাইড সাইকোলজির একটি সমুন্নত শাখা।

হিপ্নোটিজম, মেসমেরিজ এবং এনিমেল ম্যাগ্নেটিজম যদিওবা পরস্পর স্বতন্ত্র তবুও তাদের মাঝে গভীর সাদৃশ্য বিদ্যমান।

সম্মোহিত বা মেহিত অবস্থাকে এক কথায় "হিপ্নোসিস" বলা হয়; যখন সম্মোহিত ব্যক্তির বহির্মন বা অবজেক্টিভ মাইন্ড খুবই শান্ত, স্থীর, সুপ্ত ও নিশ্চল থাকে অপরদিকে অন্তর্মন বা সাবজেকটিভ মাইন্ড স্বাভাবিক ক্রিয়ারত থাকে।

তাহলে উপরের প্যারা হতে এটা শিখলাম যে মানুষের মনের ভেতরেও দুইটা অংশ আছে (১) বহির্মন বা অবজেকটিভ মাইন্ড (২) অন্তর্মন বা সাবজেকটিভ মাইন্ড।

মূলত বহির্মন হলো মানুষের বাইরের মন; যেমনটা আমরা আমাদের সহজাত আচার আচরণে প্রকাশ করি।
আর অন্তর্মন হলো মানুষের ভেতরের সেই সুপ্ত মন বা চরিত্র যা শুধুমাত্র উক্ত ব্যক্তিই অবগত থাকেন।

উদাহরণস্বরূপ "আমি সলমানকে মনে মনে হিংসা করি। এক শুক্রবার জুম্মা নামায পড়ার সময় সালমানের সাথে আমার পথে দেখা হলো। এখন আমি তাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সালাম দিলাম এবং মনে মনে গালি দিলাম"

এখানে সালাম দেওয়া হলো অবজেক্টিভ মাইন্ড এবং গালি হলো সাবজেকটিভ মাইন্ড।

প্রত্যেকটা মানুষের মাঝেই সহজাতভাবে সাবজেকটিভ ও অবজেকটিভ মাইন্ডের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান থাকে।

যিনি মানুষকে সম্মোহন করেন তিনি সম্মোহনবিৎ বা হিপ্মোটিস্ট  নামে পরিচিত; অপরদিকে যে মানুষকে সম্মোহন দেখিয়ে বেড়ায় তাকে হিপ্নোটাইজার বলে (আমাদের দেশে রাস্তা রাস্তায় ফুটপাতে অনেক ক্যানভাসার আছেন যারা কথায় জাদুতে মানুষকে সম্মোহন করে স্বার্থ হাসিল করেন, আদতে তারা নিম্নস্তরের হিপ্নোটাইজার ছাড়া আর কিচ্ছু না)।

জড় দর্শনেন্দ্রিয়ের সহায়তা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র মনশ্চক্ষুতে অতীত, দূরবর্তী বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ দর্শনকে দিব্যদৃষ্টি বলে।
প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরেই এই অতিন্দ্রীয় শক্তি সাম্যকভাবে বিদ্যমান; হয়তো ব্যক্তিভেদে তা কমবেশি হতে পারে। আবার প্রকৃতিপ্রদত্ত এই শক্তি অনেকের মাঝে স্রেফ সুপ্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে।

সাধারণত যারা সৎ চরিত্র এবং ভালো মনের মানুষ, যাদের স্বপ্ন প্রায়শ সত্যিই হয় তাদের ভেতর এই শক্তিটা প্রয়শ বিদ্যমান থাকে।

ক্রিস্টাল (একটি উন্নত প্রজাতীয় কাঁচ) এর সহায়তায় অতীত,দূরবর্তী অজানা বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ জানাই হলো ক্রিস্টাল গেইজিং।

কারো মনের চিন্তা-চেতনা পড়া'কে মাইন্ড রিডিং বলা হয়; মাইন্ড রিডিং দুই ভাবে করা যায় (১) স্পর্শ করে  (২) স্পর্শ ছাড়াই।

কাউকে স্পর্শ করে তার মন পড়ে ফেলাকে মাসল রিডিং বলে আর স্পর্শ ছাড়াই মনের চিন্তা পঠনকে বলা হয় টেলিপ্যাথি।
টেলিপ্যাথিতে অনেক দূরের মানুষের চিন্তা চেতনা পর্যন্ত উপলব্ধি করা সম্ভব হয়।

মনের শক্তি দ্বারা মৃত-ব্যক্তিদের সহিত কথা বার্তাকে বলা হয় দিব্যশ্রুতিবিদ্যা; অন্যদিকে মনের শক্তিতে কোন বস্তু স্পর্শ করে তার অতীত ইতিহাস, প্রকৃতি,স্মৃতি ইত্যাদি সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়াকে দিব্যানুভূতি বলা হয়

সাধারণত এনিম্যেল ম্যাগনেটিজমে ধারনা করা হয় মানুষ্য শরীর হতে নির্গত সূক্ষাতিসূক্ষ এক ধরণের তরল পদার্থ যা হাত বুলানো বা পাস (pass) এর মাধ্যমে অন্যকে সম্মোহিত করে; অপরদিকে হিপ্নোটিজমের ক্ষেত্রে কোন বাক্য বা শব্দ অথবা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে পাত্র ( যাকে সম্মোহিত করা হচ্ছে) এর মনে আদশ বা কমান্ড এর মাধ্যমে আবেগ বা বিশ্বাস জ্ঞাপন করা হয়।

সম্মোহন কি আসলেই কাজ করে?

এতোদূর লেখা পড়ার পর আপনার মনে যদি এই সন্দেহ জাগে যে সম্মোহন আসলেই কাজ করে কিনা তাহলে আপনাকে একটা উদাহরণ দিই...

কিছু কিছু মানুষ ঘুমের মধ্যে হাটাহাটি করে (এক প্রকার রোগ বিশেষ) যাকে আমরা স্লিপ ওয়াকিং বলে থাকি। শুধু হাটাহাটি নয় এমনকি ঘুমের মাঝে কিছু লেখা, গান গাওয়া এমন বিষয়গুলোও পরিলক্ষিত হয়; অন্তত ঘুমের ঘোরে কথা বলার বিষয়টি তো আপনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন।
সাধরণ ঘুম ভেঙ্গে হেলে এইসব কার্যকালপ আর মনে থাকে না....এইসব কেন হয় বলুন তো???

মানুষের বহির্মন ঘুমন্ত থাকলেও অন্তর্মন মানুষের শরীরটাকে জাগিয়ে নির্দিষ্ট কমান্ড অনুযায়ী কাজ করাতে বাধ্য করে....সম্মোহিত বা আবেশী শরীরে আমরা যেন অন্তর্মনে আদেশেই পরিচালিত হই!

তবে যেহেতু বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা আসছে তাই স্পষ্ট করেই বলে রাখি...

(১) আপনার ভেতরে যদি হিপ্নোটিজমের প্রতি বিশ্বাস না থাকে তাহলেও খুব সহজেই আপনাকে সম্মোহিত করা সম্ভব।
(২) আপনার ভেতর যদি হিপ্নোটিজমে বিশ্বাস না থাকে তাহলে আপনি কখনোই অন্যকে সম্মোহিত করতে পারবেন না।
অতএব ইটস ইউর চয়েজ.....

হিপ্নোটিজম বিদ্যায় সফল হওয়ার শর্ত

(১) আত্ম-বিশ্বাস: হিপ্নোটিজমে আপনার নিজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে যে "আপনি অবশ্যই হিপ্নোটিজম শিক্ষায় সফল হবেন"। আপনার যদি নিজের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস না থাকে তাহলে আপনি কখনোই সফল হতে পারবেন না।
একইসাথে হিপ্নোটিজম বিষয়ে যদি আপনার মনে নূন্যতমও অবিশ্বাস বা সন্দেহ থাকে তাহলে আপনি কৃডকার্য হতে পারবেন না।

(২) স্থির সংকল্প: হিপ্নোটিজম শিক্ষায় আপনাকে আপনাকে স্থির সংকল্প হতে হবে; "একটু শিখে মন চাইলো না তাই শিখলাম না" এমনটি হওয়া চলবে না।

আপনাকে আপনার শিক্ষার ওপর মনস্থির করে শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে এমনি সংকল্প গ্রহণ করতে হবে।

(৩) অধ্যাবসয়: হিপ্নোটিজম শিক্ষায় আপনাকে অবশ্যই অধ্যাবসয় অবলম্বন করতে হবে; "একবার সফল না হলে মনোবল হারানো চলবে না" আপনাকে ততোক্ষণ চেষ্টা করতে হবে যতোক্ষন না পর্যন্ত সফল হচ্ছেন।

(৪) সহিষ্ণুতা: আপনাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে, আপনার মাঝে যদি ধৈর্য্য না থাকে তাহলে হিপ্নোটিজম কেন, কোন শিক্ষাতেই সফলকাম হতে পারবেন না।

(৫) গোপনীয়তা রক্ষা: হিপ্নোটিজম হলো একটি গুপ্ত শিক্ষা, তাই এই শিক্ষাটি লুপ্ত অবস্থায় রাখতে হবে। আপনি যদি এমন কাউকে হিপ্নোটিজম শেখাতে চান যার এই বিদ্যার ওপর বিশ্বাস নেই তাহলে আপনার নিজের ক্ষমতার ওপর নেগেটিভ ইফেক্ট পড়বে এবং আপনার ক্ষমতা কমে যাবে।
কেন????
কারন কেউ যখন আপনাকে হিপ্নোটিজম বিষয়ে সন্দেহপ্রবণতাযুক্ত কথা বলবে তখন আপনার অন্তর্মনের সেল্ফ কনফিডেন্সের ওপর এর বাজে একটা প্রভাব পড়বে,ফলশ্রুতিতে আপনার হিপ্নোটাইজ পাওয়ার নিঃশেষিত হয়ে যাবে।

সবিশেষ প্রকৃত সম্মোহনী শক্তি অর্জন করতে প্রত্যাহিক জীবনে আত্মসংযমী এবং সৎভাবে জীবনযাপন করা আবশ্যক।

এক মানুষের দুই মন!

সাধারণত প্রতিটা মানুষেরই মন'ই দুইটি ভাগে বিভক্ত, একটি হলো বহির্মন বা সাবজেকটিভ মাইন্ড তথা কনশিয়াস মাইন্ড এবং অপরটি হলো অন্তর্মন বা অবজেকটিভ মাইন্ড তথা সাবকনশিয়াস মাইন্ড।

বহির্মন হলো মানুষের স্বাভাবিক সচেতন অবস্থা যা জ্ঞান-বিবেক-বুদ্ধি এবং যুক্তি দিয়ে পরিচালিত হয় ; অপরদিক অন্তর্মন কোন লজিকের তোয়াক্কা না করেই তাকে যেই কমান্ড বা আদেশ দেওয়া হলো সেটিই বিশ্বাস করে ফলোআপ করে।

আচ্ছা মনে করি,  অন্তর্মন এবং বহির্মন হলো দুই ভাই যেখানে অন্তর্মন হলো বড় ভাই এবং বহির্মন হলো ছোটভাই। অন্তর্মন বোকা- সোকা সরল বিশ্বাসী এবং বহির্মন চালাক।
এখন দুইভাই মিলে চালের ব্যবসা শুরু করলো যেখানে বড় হলো মালিক এবং ছোটভাই হলো ম্যানেজার।
যেহেতু বড় ভাই বোকা আর ছোটভাই চালাক তাই বড় ভাই সারাদিন চালের গোডাউনে বসে থাকে আর ছোটভাই দোকানে কাস্টমারের কাছে চাউল বিক্রি করে।

এখন একটা চোর যদি চাউল চুড়ি করতে চায় তাহলে তাকে কি করতে হবে??

নিশ্চয়ই ছোটভাই এর চোখ ফাঁকি দিয়ে তাকে গুদামে বড় ভাইয়ের কাছে পৌছাতে হবে এবং বড় ভাইকে সরল বিশ্বাসে বোকা বানিয়ে চাউল চুরি করতে হবে।

ঠিক একইভাবে আমরা যদি কাউকে সম্মোহিত করতে চাই তাহলে উক্ত পাত্রের সাবজেক্টিভ মাইন্ডটাকে ফাঁকি দিয়ে তথা নিষ্ক্রিয় করে তাহার অবজেকটিভ মাইন্ডে পৌছাতে হবে এবং উদ্দেশ্য মতে কমান্ড দিতে হবে।

আমরা যদি পাত্রের অবজেকটিভ মাইন্ডে প্রবেশ করে এক টুকরা কাগজ'কে বিস্কিট বলে বিশ্বাস করতে বলি, তাহলে উক্ত পাত্র তাকে বিস্কিট বলেই মেনে নিবে।
আমরা যদি পাত্রকে একটা বই দেখিশে বাঘ বলি তাহলে সে বইটাকে বাঘ বলেই মেনে নিবে এবং ভয় পাবে।

সাবজেকটিভ মাইন্ড সর্বদাই সচেতন থাকে এবং অবজেক্টিভ মাইন্ড সচরাচর নিদ্রাবস্থায় নিষ্ক্রিয় থাকে; সাবজেকটিভ মাইন্ড ইন্দ্রিয় নির্ভর কিন্তু অবজেকটিভ মাইন্ড ইন্দ্রিয় নির্ভর নয় এবং স্বাধীন।

সাধারণত সাবজেকটিভ মাইন্ডকে নিষ্ক্রিয় করার তিনটি উপায় আছে; (১) কমান্ড বা আদেশ (২) দৃষ্টিক্ষেপন (৩) হাত বুলান বা পাস।

হিপ্নোটিক কমান্ডে বশীকরণ!

সাধারণত অন্যকে বশীভূত বা সম্মোহন করতে যেসকল ইঙ্গিত তা হউক বাক্য, চিন্তাশক্তি কিংবা অঙ্গ ভঙ্গি করা হয় তাকে সম্মোহনী আদেশ বা হিপ্নোটিক কমান্ড বলে।
সম্মোহনী বাক্য বা হিপ্নোটিক কমান্ড ৩ ভাগে বিভক্ত (১) বাক্য (২) চিন্তাশক্তি (৩) অঙ্গ ভঙ্গি।

আপনি যদি এমন কাউকে সম্মোহন করতে চান যার সাথে আপনি কথা বলতে পারেন তাহলে বাক্য দ্বারা সম্মোহনী আদেশ দিতে পারেন।
অন্যদিকে আপনি যার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন না তাকে সম্মোহিত করতে চিন্তাশক্তি দ্বারা সম্মোহনী আদেশ দিতে পারেন। অন্যদিকে অঙ্গভঙ্গি দ্বারা স্বাধীনভাবে হিপ্নোটিক কমান্ড দেওয়া কঠিন হলেও এই তিন প্রকার সম্মোহনী আদেশ একসাথে কারো ওপর প্রয়োগ করা হলে তার সম্মোহিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবলতর হয় (মূলত এই তিনটি সম্মোহনী কমান্ড এর সম্মিলিত রূপই সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী হয়ে থাকে)।

সম্মোহনী আদেশ (বাক্য) হতে হবে ধীর, গম্ভীর এবং স্পষ্ট ; কাউকে সম্মোহনী আদেশ দেওয়ার পূর্বে নিজের মনে মনেই ৩/৪ বার আওড়ে নিতে পারেন।
মনে রাখবেন আপনি যেই সম্মোহনী আদেশ দিবেন সেটা অন্যের মনে তখনি আস্থা বা বিশ্বাস অর্জন করতে সমর্থ হবে যখন তা আপনার মনে অন্তত স্থায়ীভাবে বিশ্বাসযোগ্য হবে। আপনি কাউকে এমন সম্মোহনী আদেশ দিলেন যা আপনি নিজেই বিশ্বাস করেন না বা মনে সন্দেহ পোষণ করেন তাহলে সেই আদেশ কিভাবে অন্যকে সম্মোহিত করতে পারবে???

সম্মোহনী আদেশ দেবার ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু শব্দের দিকে খেয়াল করতে হবে। যেমন আপনি যদি একজন দুধ বিক্রেতা হউন তাহলে আপনাকে ক্রেতার কাছে এমনভাবে কথা বলতে হবে....

"আমার গাভীর দুধটাই সবচেয়ে ভালো, এটাই বাজারের খাঁটি দুধ, মন চাইলে আপনি পরখ করে নিয়েন। দরকার হলে আজ শুধু দুধ নিয়ে যান পয়সা দিতে হবেনা, কাল দুধ খেয়ে ভালো লাগলে পয়সা দিয়েন"

এইখানে খাঁটি, পরখ এবং পয়সা শব্দগুলা দ্বারা আপনি ক্রেতাকে কনভিন্স করছেন। আপনি যদি মনে মনে ভয় পান যে কাল দুধের দাম ফাকি দিয়ে চলে যাবে তাহলে ভুল ভাবছেন...

একজন ক্রেতা কখনোই স্বভাবতই বিশ্বাসের বিপরীতে ফাঁকি দিতে চাইবে না। এমনকি এইসব কথা শুধুমাত্র ক্রেতাকে কনভিন্স করার জন্যই বলছেন, আদতে তিনি দুধের মূল্য দিয়েই আপনার নিকট হতে কিনবেন।
পক্ষান্তরে টাকার বদলে পয়সা বলার মাধ্যমে বিশ্বাস এবং দৃঢ়তার স্বাপেক্ষে মূল্যটাকে তুচ্ছ বিবেচনা করা হয়েছে যাতে ক্রেটা আকৃষ্ট হয়।

একইরূপ ক্রেতা যদি আজ দুধ নাও কিনতে চান তাহলে " আচ্ছা আজ বাসায় যান, কাল যদি বাচ্চারা পুষ্টিকর খাঁটি দুধ খেতে চায় তাহলে বইলেন কিন্তু" এই বাক্যটি আপনাকে পরবর্তী দিনে ক্রেতাকে দুধ কিনতে প্রলুব্ধ করবে ( এখানে চিন্তাশক্তি বিষয়টা পরবর্তী দিন পর্যন্ত ক্রেতার মাথাতে গেথে যাবে)।

যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে দুধে কি পানি মেশানো নয় তো?
 তাহলে আপনি খানিকটা (অল্প একটু রাগ) মুখে নিয়ে বলুন "আমি দুধে পানি মেশাই না, আমি হালাল টাকা উপার্জন করি" এখানে খাঁটি শব্দটা বিশ্বাসযোগ্য নয় কেননা দুধে যে পানি মেশানো আজকের দিনে স্বাভাবিক তাই স্বার্থক বিশ্বাস অর্জন করতে "হালাল উপার্জন" কথাটা ক্রেতার মনে আপনার প্রতি সম্মান তথা বিশ্বাস তৈরী করবে।

আপনি যদি মনে করেন যে একটা পোস্টে আমি হিপ্নোটিজম শেখাতে শুধু দুধে বিক্রিতে সীমাবদ্ধতা তাহলে আপনাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি এইরূপ হিপ্নোটিক কমান্ড একজন মার্কেটিং এক্সিকিউটিভকে যেমন সাকসেস করতে পারে তেমনি একজন রোগীকে ঔষধ ছাড়াই আপাত সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
বিপরীতে শুধুমাত্র পজেটিভ থিংকিং আপনার ব্রেইনে সফলতার ইনআরশিয়া তৈরী করে যা আপনাকে প্রতিনিয়ত সাবকনশিয়াস মাইন্ডে মোটিভেট করে, সুতরাং হিপ্নোসিস যেমন আপনাকে সাইকোলজির জগতে মাইন্ড হ্যাকার বানাতে পারে তেমনি সেল্ফ হিপ্নোসিস আপনার লাইফে বয়ে নিয়ে আসতে পারে সত্যিকারের হ্যাপিনেস!!!!

Post a Comment

0 Comments